
চা শুনলেই মন কেমন করে উঠে না, চুমুকে স্বাদ নিতে ইচ্ছে করেনা, এমন মানুষ আজকাল পাওয়াই দুস্কর।
এককাপ গরম চা সামনে ধরলেই সব কিছু শান্ত। মন প্রাণ সতেজ করতে এর নেই জুড়ি।
এই সার্বজনীন পানীয় কিন্তু এককালে শুধুই ঔষধি পানীয় হিসেবেই গণ্য হত দীর্ঘদিন।
যেটুকু জানা যায় চীনে প্রথম চা এর ব্যবহার হয়। প্রায় 5000 বছর আগে রাজা শেনন একদিন গরম জল খেতে বসেছিলেন একটি ঝোপের মধ্যে। একটি পাতা পড়ে সেই গরম জলে, সেই পাতাটি ছিল চা পাতা। রাজার খুব ভালো লেগে যায় সেই চা। এরপর রাজার রাঁধুনি নিয়মিত চা বানিয়ে দেন। এর থেকেই শুরু হয় চা এর গল্প।
চা আবিষ্কারের এই জনপ্রিয় গল্পটি বহুল প্রচলিত হলেও আসলে কিন্তু আলাদা। জলে পাতা পড়লেই চা হয় না। চা এর অনেক processing আছে।
যাইহোক চা দীর্ঘদিন ধরে চীনের খুব জনপ্রিয় ওষুধ ছিল। শেষে চীন থেকে একজন বৌদ্ধ সন্ন্যাসী জাপানে নিয়ে আসেন চা গাছ। আর এর ব্যবহার ও শিখিয়ে দেন। যথারীতি চা জয় করে নেয় জাপানি মন।
পরবর্তীতে ব্রিটিশরা যখন জাপান যায় তখন প্রথম চা পান করে। ব্রিটিশদের হাত ধরে সারা বিশ্বে চা ছড়িয়ে পড়ে, কিন্তু চা তখন সারা বিশ্বে রফতানি করত চীন।
ভারতের নাগাল্যান্ডে একরকম পানীয় পান করতে দেখে একজন ব্রিটিশ। তিনি গাছটির সাথে চা এর সাদৃশ্য দেখে sample পাঠান কোলকাতায়। প্রমাণিত হয় যে সেই গাছটি চা। এরপরে সারা ভারতের মাটি চা উপযোগী হওয়াতে ভারত জুড়ে চা এর ব্যাপক চাষ চালু হয়। সহজলভ্য শ্রমিক আর অনুকূল আবহাওয়াতে চা চাষ বেড়ে ওঠে। কয়েক বছরের মধ্যেই চা রফতানিতে দ্বিতীয় স্থানে পৌঁছয় ভারতের চা।
প্রথম প্রথম ভারতীয়দের বিনামূল্যে চা খাওয়াত ব্রিটিশরা। এই ধারনাও তৈরি করে দেয় চা খুব উচ্চ স্তরের পানীয়। জাতে উঠার জন্য স্বচ্ছল ভারতীয়রা চা খেতে শুরু করে ধীরে ধীরে। দূরদর্শী ব্রিটিশদের সেই strategyতে ভারতীয়রা চা পানে addicted হতে বেশিদিন সময় নেয় নি। এখন চা ভারতের জাতীয় পানীয়তে পরিণত হয়েছে।
সেরা চা উৎপাদনে এখন ভারত সবার আগে, এখনো অব্দি দার্জিলিং আর আসাম চা পৃথিবীর সেরা চা হিসেবেই গণ্য হয়।
চা তার নিজের গুনে নিজের জায়গা করে নিয়েছে সারা পৃথিবীতে। বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন নাম পেয়েছে।
তিব্বতে মাখন চা গুটিগুটি নামে জনপ্রিয়, শরীর দ্রুত গরম করতে আর energy যোগাতে এই চা এর জুড়ি নেই।
এছাড়া কাশ্মীরে কেশর চা, বাদাম চা খুব জনপ্রিয়। মধু চা ও খুব জনপ্রিয় এখন।
এছাড়া বার্লি চা, মাশরুম চা বিশেষ ওষুধি গুনে সমৃদ্ধ। বিভিন্ন ফুলের পাঁপড়ি রেনু গাছের শিকড় দিয়ে বানানো হয় চা, যখন যেমন প্রয়োজন হয়। যষ্ঠীমধু আর বিটনুন দিয়ে বানানো চা এখন খুবই প্রিয় অনেকের। এলাচ চা, মসলা চা, লেবু চা, রসুন চা, দুধ চা এগুলোও জনপ্রিয়।
গ্রাম বাংলার আদা তুলসী চা যেকোন সর্দি জরের সময়ে খুবই বহুল ব্যবহৃত হয় এখনও।
প্রচন্ড গরমে গরম চা এর পাশাপাশি iced tea ও আজকাল খুব জনপ্রিয়তা পেয়েছে।
পানীয় চা এর পাশাপাশি চা গাছ দিয়ে বানানো টেবিল আর অন্যান্য শৌখিন আসবাবপত্র এখনো খুবই জনপ্রিয় সেই পুরনো সময় থেকেই।
জনপ্রিয় গান-
সায়দ মেরি শাদি কে খয়াল
এককাপ চা এ আমি তোমাকে চাই
অথবা
এক গরম চায় কি পেয়ালি হো…
এই গানগুলো সব বয়সের লোকজনের চা প্রীতি কেই প্রতিফলিত করে।
যতই রাজনৈতিক সামাজিক মানসিক তরজা থাকুক, চা এর বৈঠকে বসলে সব বিরোধ মিটে যায়। শুধু বিশ্ব সর্বধর্ম সমন্বয়ে চা এখনো সাধারণ ভূমিকা নিতে পারেনি কেন সেটাই ভাবায়…
সব মিলিয়ে পানীয় হিসেবে চা যে এখন international craze, সন্দেহ নেই। মোড়ে মোড়ে চা দোকান আর তাতে জমজমাট ভীড়ে আজ চা এর বিজয়রথ অপ্রতিরোধ্য।
Post Credit : Prithwis Sen