AdventureWorld History

দক্ষিণ মেরু জয়ের রোমাঞ্চকর গল্প

মাঝ সমুদ্রে টেলিগ্রাম মারফৎ খবরটা পেয়েছিলেন ব্রিটিশ অভিযাত্রী ও রয়াল নেভির ক্যাপ্টেন রবার্ট ফ্যালকন স্কট। ৩ জুন অসলো থেকে ‘ফ্রাম’ নামের এক জাহাজে করে দক্ষিণ-মেরু রওনা হয়ে গিয়েছেন নরওয়ের অভিযাত্রী রোয়াল আমুনসেন। ক্যাপ্টেন স্কটের চেয়ে ১২ দিন আগেই।

রয়াল নেভির ক্যাপ্টেন রবার্ট ফ্যালকন স্কট

গম্ভীর হয়ে গিয়েছিলেন ক্যাপ্টেন স্কট। তাঁর দক্ষিণ মেরু অভিযানের কথা বিশ্বের সবাই জেনে গেছে। কিন্তু আমুনসেন যে  একই উদ্দেশ্যে গোপনে রওনা হয়ে গেছেন তা কাকপক্ষীতেও টের পায়নি। এই  ১২ দিনে অনেকটা পথ এগিয়ে গেছেন আমুনসেন।

আমুনসেন

কিন্তু জাতিতে ব্রিটিশ, ক্যাপ্টেন স্কট পণ করেছিলেন  আমুনসেনকে কোনও মতেই দক্ষিণ-মেরুতে তাঁর আগে নরওয়ের পতাকা গাঁথতে দেবেন না। ধূর্ত একজন নরওয়েবাসীর কাছে হেরে যাবে ব্রিটিশরা। না কোনও মতেই নয়। তাই উদ্দামগতিতে সাগরের জল তোলপাড় করে ছুটেছিল ক্যাপ্টেন স্কটের জাহাজ টেরা নোভা

অ্যান্টার্কটিকায় ক্যাপ্টেন স্কটের জাহাজ টেরা নোভা

১৭ জানুয়ারি,১৯১২

আজই হয় এসপার নয় উসপার। ভৌগলিক দক্ষিণ মেরুতে পৌঁছাবার এটাই স্কটের দলের শেষ চেষ্টা। আর মাত্র কয়েক মাইল। ক’দিন ধরে আটকে আছেন তাঁবুর ভেতর। বাইরে প্রবল তুষারঝড় চলছে। কিন্তু আর দেরি করা ঠিক হবে না। চোয়াল শক্ত করে তাঁবুর ভেতর উঠে দাঁড়িয়েছিলেন ক্যাপ্টেন রবার্ট ফ্যলকন স্কট।

অ্যান্টার্কটিকার কেপ ইভান্স থেকে  ভৌগলিক দক্ষিণ-মেরুর দিকে যাত্রা শুরুর সময় দলে ছিলেন ১৬ জন অভিযাত্রী। সঙ্গে ছিল ২৩ টি সাইবেরিয়ান হাস্কি কুকুর, ১৮ টি  ঘোড়া ও ১৩ টি স্লেজ-গাড়ি ভর্তি অভিযানের রসদ। এরপর কেটে গেছে ১০৪ দিন। ১৭৮৩ কিমি পথ পেরিয়ে  আজ ক্যাপ্টেন স্কট স্বপ্নের দ্বারপ্রান্তে।

কেপ ইভানস থেকে যাত্রা শুরুর আগে ক্যাপ্টেন স্কটের দল

ভাগ্যের পরিহাসে স্কটের  সঙ্গে রয়েছেন মাত্র চারজন সদস্য। ঘোড়াগুলি অপরিচিত পরিবেশের অসহনীয় আবহাওয়ায় খাপ খাওয়াতে না পেরে মারা গেছে। বেয়ার্ডমোর হিমবাহ থেকে হাস্কি কুকুরের দলকে নিয়ে ফিরে গেছেন হাল ছেড়ে দেওয়া ১১ সদস্য। হাল ছাড়েননি ক্যাপ্টেন স্কট এবং তাঁর চার বিশ্বস্ত সঙ্গী, লেফটেন্যান্ট হেনরি বোয়ার, ডঃ এডওয়ার্ড উইলসন, ক্যাপ্টেন  টাইটাস ওয়াটেস ও  অফিসার এডগার ইভানস

 চূড়ান্তভাবে অসহযোগিতা করছিল আবহাওয়া। তাপমাত্রা ছিল মাইনাস ৪৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট। অভিযাত্রীদের সামনে ছিল হাঁটার পক্ষে অসম্ভব ও ভয়ঙ্কর তুষারাচ্ছাদিত মালভূমির শেষ ও কঠিনতম অংশ। কখনও  তুষারঝড় ওঠে, তো কখনও বরফে পড়ে ছিটকে আসা সূর্যের প্রখর রশ্মি চোখ ধাঁধিয়ে দেয়। এরই মধ্যে অভিযাত্রী শুরু করেছিলেন ভৌগলিক দক্ষিণ-মেরুর জিরো-পয়েন্টের দিকে তাঁদের ফাইনাল পুশ। 

দক্ষিণ মেরুর দিকে এগিয়ে চলেছেন ওঁরা পাঁচজন (সেলফি)

 আর মাত্র কয়েক মিটার

কিন্তু ও কী! ওখানে তো একটা পতাকা উড়ছে। ওটা কাদের পতাকা! কাছে গিয়ে ভেঙে পড়েছিলেন স্কটের চার সঙ্গী। হাঁটু মুড়ে বরফে বসে পড়েছিলেন। ক্যাপ্টেন স্কট যেন পাথর হয়ে গিয়েছিলেন। স্কটরা দক্ষিণ-মেরু পৌঁছাবার চার সপ্তাহ আগেই, ১৯১১ সালের ১৪ ডিসেমবর  দক্ষিণ-মেরুতে বিজয় পতাকা উড়িয়ে দিয়েছেন নরওয়ের প্রতিদ্বন্দী রোয়াল আমুনসেন।

১৪ ডিসেম্বর ১৯১১, বিকেল তিনটের সময় দক্ষিণ মেরুতে নরওয়ের পতাকা স্থাপন করলেন আমুনসেন .

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

সেই আমুনসেন, যিনি মাঝ সমুদ্রে এসে জাহাজের ক্যাপটেন ও সহ অভিযাত্রীদের জানিয়েছিলেন তিনি দক্ষিণ মেরু জয়ের জন্য বেরিয়েছেন। আমুনসেনের পরিকল্পনা ও কৌশলের কাছে হার মেনে মানসিক দিক থেকে শোচনীয়ভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিল ক্যাপ্টেন স্কটের দল।

পরের দিন সকাল সাড়ে সাতটায় স্কটের দল বেরিয়ে পড়েছিল। রাতে তাপমাত্রা ছিল মাইনাস ২২ ডিগ্রি। আকাশ মেঘলা হয়ে আসছিল। সারা রাত ঘুমায়নি তারা। পরাজয়ের গ্লানি তাদের গ্রাস করেছিল।

তবুও ক্যাপ্টেন স্কটের দল, আমুনসেনের দলের স্থাপন করা পতাকাটি থেকে বেশ কিছুটা দূরে, ১৮ জানুয়ারি দক্ষিণ মেরুতে স্থাপন করেছিলেন ব্রিটিশ পতাকা ইউনিয়ন জ্যাক। পতাকাটি নিজে হাতে বানিয়ে দিয়েছিলেন ইংল্যান্ডের রাণী স্বয়ং ভিক্টোরিয়া। তাঁকে অসম্মানিত হতে দেবেন না স্কট।

দক্ষিণ মেরুতে স্কটের দলের সেলফি। বাম দিক থেকে দাঁড়িয়ে ওয়াটেস,স্কট ও ইভানস। বসে বাম দিক থেকে বোয়ার ও উইলসন

ভগ্ন হৃদয়ে দেশে ফেরার পথ ধরেছিল স্কটের টিম। নাকি ‘না ফেরার’ দেশের পথ ধরেছিল। তুষারাচ্ছাদিত পথ, মাঝে মধ্যেই হাঙ্গরের মতো হাঁ করে আছে বরফ ফাটল। একঘেয়ে, ওঠা আর নামা। বাড়ি ফেরার জন্য প্রায় উন্মাদ হয়ে গিয়েছিলেন স্কটের চার সঙ্গী।  এডগার ইভানস একটু  অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। তবুও উপায় নেই হাঁটতে হবে। ফিরতে হবে প্রায় ৮০০ মাইল।

১৭ ফেব্রুয়ারি, ১৯১২

মেঘলা আকাশের নীচে তুষার সমুদ্রের মধ্যে  দিয়ে ভেতরে ভেতরে ভেঙে যাওয়া অভিযাত্রীরা অবসন্ন দেহে স্লেজ টেনে নিয়ে চলেছিলেন। খাবার ও জ্বালানি অনেকটা কমে গেছে খারাপ আবহাওয়ার জন্য দিন বেশি লেগে যাওয়ায়। কয়েকশো কিলোমিটার দূরের ডিপোতে খাবার আর জ্বালানি বোঝাই করা আছে। খাবার ফুরনোর আগে যেভাবেই হোক সেখানে পৌঁছাতে হবে। তাই অভিযাত্রীদের দ্রুত চলতে নির্দেশ দিয়েছিলেন ক্যাপ্টেন স্কট।

সেদিন সকালে কিছুক্ষণ পথ চলেই ইভানস তাঁর স্লেজ টানা ছেড়ে দিয়েছিলেন। স্কি দুটি বার বার তাঁর পা থেকে খুলে যাচ্ছিল। লেফটেন্যান্ট হেনরি বোয়ারের কাছ থেকে বুটের সঙ্গে স্কি দুটিকে ভালোভাবে বাঁধবার জন্য ধাতব তার চেয়ে নিয়েছিলেন ইভানস। কিন্তু সদ্য পড়া তুষার স্কিয়ের তলায় জমা হয়ে শক্ত হয়ে গিয়ে চলায় বাধা সৃষ্টি করছিল। অভিযাত্রীদের ক্রমশ ঘিরে  ধরছিল জমাট কুয়াশা।

লেফটেন্যান্ট হেনরি বোয়ার

একঘন্টা চলার পর মনুমেন্ট আকৃতির একটি পাথরের সামনে দাঁড়িয়ে পড়েছিলেন ক্যাপ্টেন স্কট। কারণ ইভানস অনেক পিছিয়ে পড়েছে। লাঞ্চের জন্য তাঁবু ফেলতে বলেছিলেন ক্যাপ্টেন স্কট। এত তাড়াতাড়ি তাঁবু না ফেললেও চলত। ইভানসের জন্যই ক্যাপ্টেন স্কট সময়ের আগেই তাঁবু ফেলতে বলেছিলেন। লাঞ্চ বানানো হল, ইভানসের জন্য রেখে দিয়ে বাকিরা খেয়েও নিলেন। তবুও আসেন না ইভানস।

প্রায় দু’ঘন্টা অপেক্ষার পর স্কট ও বাকি তিনজন ইভানসকে খুঁজতে ফিরে চললেন। অনেকটা দূর গিয়ে পাওয়া গেল এডগার ইভানসকে। হাটুর ওপর ভর দিয়ে বসেছিলেন বরফের ওপর। হাতে দস্তানা ছিল না। হাতের আঙ্গুল গুলিতে ফ্রস্টবাইট হয়ে গিয়েছিল। জামাকাপড় ছিল অবিন্যস্ত।

“কী হয়েছে ইভানস”, জিজ্ঞেস করেছিলেন ক্যাপ্টেন স্কট। ঘোলাটে  চোখে দলনেতার দিকে তাকিয়ে ইভানস আস্তে আস্তে উত্তর দিয়েছিলেন, “আমি জানি না।” প্রমাদ গুণেছিলেন অভিজ্ঞ অভিযাত্রী স্কট। তাঁর মনে হয়েছিল ইভানস অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলেন। ইভানসকে দাঁড় করবার চেষ্টা শুরু হয়েছিল। কিন্তু কয়েক পা গিয়ে ইভানস আবার পড়ে গিয়েছিলেন। তাঁর মধ্যে সামান্য জীবনীশক্তিও অবশিষ্ট ছিল না।

পেটি অফিসার এডগার ইভানস

ওয়েটেসকে  ইভানসের সঙ্গে রেখে উইলসন, বোয়ার ও স্কট  গিয়েছিলেন ইভানসকে বয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য স্লেজ আনতে। স্কটেরা যখন স্লেজ নিয়ে ফিরে এসেছিলেন ইভানস তখন অচৈতন্য। স্লেজে করে ইভানসকে আনা হয়েছিল তাঁবুতে।বরফ গলিয়ে গরম জল করে, কফি, ব্র্যান্ডি খাইয়ে, ইঞ্জেকশন দিয়ে ইভানসকে বাঁচাবার আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলেন ডঃ এডওয়ার্ড উইলসন।

ডঃ উইলসন

বিফল হয়েছিল সব প্রচেষ্টা। রাত ১২.৩০ মিনিটে অভিযান ছেড়ে চিরকালের জন্য চলে গিয়েছিলেন ইভানস। ভোরবেলায় তুষার সমাধিতে ইভানসকে শুইয়ে দিয়ে এগিয়ে চলেছিলেন বাকি চারজন। স্কট ডাইরিতে লিখেছিলেন, “আগামী দিনগুলি সুখের হবে বলে মনে হচ্ছে না।”

 ১৫ মার্চ, ১৯১২

টানা প্রায় এক মাস হেঁটেছিলেন চার অভিযাত্রী।  এদিন লাঞ্চের সময় ক্যাপ্টেন টাইটাস ওয়াটেস দলনেতাকে বলেছিলেন তিনি আর হাঁটতে পারবেন না। দল যেন তাঁকে স্লিপিং ব্যাগের মধ্যে রেখে দিয়ে এগিয়ে যায়। কিন্তু ক্যাপ্টেন স্কট ওয়াটেসকে জানিয়েছিলেন তাঁর পক্ষে সেটা সম্ভব নয়।

 বুঝিয়ে শুনিয়ে, বকাবকি করে ক্যাপ্টেন ওয়াটেসকে চলতে বাধ্য করেছিলেন ক্যাপ্টেন স্কট। কিন্তু ওয়াটেসের চলার গতি ক্রমশ ধীর থেকে ধীরতর হয়ে আসছিল। ক্যাপ্টেন স্কট  অনুমান করেছিলেন, আরেকটি ভয়ঙ্কর রাত আসতে চলেছে। 

ক্যাপ্টেন লরেন্স  টাইটাস ওয়াটেস

স্কট সেই রাতে তাঁর ডাইরিতে লিখেছিলেন,ওয়াটেস সেই রাতে তাঁর মায়ের কথা বলছিলেন। ওয়াটেস বলেছিলেন তাঁর বীরত্বপূর্ণ মৃত্যুর কথা জেনে তাঁর রেজিমেন্ট হয়ত গর্ব অনুভব করবে। প্রলাপ বকতে বকতে সেই রাতে অচেতন হয়ে গিয়েছিলেন ওয়াটেস। স্কটরা ভেবেছিলেন এটাই ওয়াটেসের শেষ ঘুম হতে চলেছে।

কিন্তু সবাইকে অবাক করে ওয়াটেস উঠে পড়েছিলেন ১৬ মার্চ সকালে। বাইরে তখন মারাত্মক তুষার ঝড় চলছিল। ওয়াটেস স্কটকে বলেছিলেন, “কিছুক্ষণের জন্য বাইরে যাচ্ছি আমি।”

তাঁবুতে  আর ফিরে আসেননি  ওয়াটেস। দলের বোঝা হতে চাননি এই সুদক্ষ অভিযাত্রী। তাই তুষার ঝড়ের সুযোগ নিয়ে অ্যান্টার্কটিকার তুষার সমুদ্রে চিরকালের জন্য স্বেচ্ছায় হারিয়ে গিয়েছিলেন ক্যাপ্টেন টাইটাস ওয়াটেস

এভাবেই হয়ত তুষার ঝড়ের ভেতর স্বেচ্ছায় হারিয়ে গিয়েছিলেন ওয়াটেস (আঁকা)

 জীবনের পথ দূরে সরে যাচ্ছিল

তবুও তিন অভিযাত্রী এগিয়ে চলেছিলেন। ২১ মার্চ ,বুধবার, ক্যাপ্টেন স্কট তাঁর ডাইরিতে লিখেছিলেন, ডিপো থেকে তাঁরা আর মাত্র ১১ মাইল দূরে আছেন। কিন্তু প্রবল ঝড়ে তাঁবুতে আটকা পড়ে আছেন। সারাদিন তাঁবুতে শুয়েই তাঁদের দিন কাটছে। ২৩ মার্চ লিখেছিলেন, “তুষার ঝড় মারাত্মক আকার নিয়েছে। উইলসন আর বোয়ার জ্বালানি আনতে যাবেন। মাত্র দুটি খাবারের প্যাকেট পড়ে আছে।”

কয়েক ঘন্টা পরে ওইদিনই আবার  লিখেছিলেন, “আমরা প্রায় শেষের কাছে চলে এসেছি। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি স্বাভাবিক ভাবেই এটা আসুক। আমরা ডিপোর দিকে এগিয়ে যাব। রাস্তায় মৃত্যু এলে আসবে।”

 ২৯ মার্চ, ১৯১২, ডাইরিতে শেষবারের মত লিখেছিলেন ক্যাপ্টেন স্কট

 “২১ মার্চ থেকে আমাদের জ্বালানি ছিল না। যেটুকু আছে তাতে বরফ গলিয়ে দুই কাপ চা হবে। খাবার শেষ। উইলসন আর বোয়ার ১১ মাইল দূরের  ডিপো থেকে জ্বালানি আনার জন্য রোজ চেষ্টা করেছেন। প্রত্যেকদিন তৈরি হয়েছেন যাওয়ার জন্য। কিন্তু টেন্টের বাইরে যেন প্রলয় চলছে। ভালোর আশা করছি না। আমরা মৃত্যুর জন্য আটকে রয়েছি। দুর্বল হয়ে পড়ছি। শেষের আর বেশি দেরি নেই। আমার মনে হয় আমি আর লিখতে পারবো না।”

ক্যাপ্টেন স্কটের সেই ঐতিহাসিক ডাইরি

২৯ অক্টোবর ১৯১২

এর বেশ কিছুদিন আগেই নিখোঁজ স্কটের টিমকে খুঁজে বার করার জন্য নেমেছিল ১১ সদস্যের এক উদ্ধারকারী দল। নেতৃত্বে ছিলেন স্কটের চরমতম প্রতিদ্বন্দী আমুনসেনের দেশ নরওয়েরই এক অভিযাত্রী ট্রিগভ গ্র্যান। ১৯১২ সালের ২৯ অক্টোবর উদ্ধারকারী দলটি খোঁজ পেয়েছিল ক্যাপ্টেন স্কট ও তাঁর দুই সঙ্গীর।

তুষারসমুদ্র প্রায় ডুবে গিয়েছিল ক্যাপ্টেন স্কটের তাঁবু। তাঁবুর ভেতর শেষশয্যায়  শুয়ে ছিলেন তিন ব্রিটিশ অভিযাত্রী। লেফটেন্যান্ট হেনরি বোয়ার ও ডঃ এডওয়ার্ড উইলসনের শরীর স্লিপিং ব্যাগের ভেতর নিখুঁত ভাবে শোয়ানো ছিল। কিন্তু ক্যাপ্টেন স্কটের স্লিপিং ব্যাগ পুরো খোলা ছিল। কোটের সব বোতামও। বরফে জমে কাঠ হয়ে গিয়েছিলেন ক্যাপ্টেন স্কট।

বরফ জমা সেই  তাঁবু, যার ভেতরে ছিল হেনরি বোয়ার,  এডওয়ার্ড উইলসন ও ক্যাপ্টেন স্কটের দেহ

বিশেষজ্ঞরা বলেছিলেন তিনজনের মধ্যে সব শেষে মারা গিয়েছিলেন ক্যাপ্টেন স্কট। দুই সঙ্গী চলে যাওয়ার পর, মৃত্যুকে এগিয়ে আনার জন্যেই কি তিনি স্লিপিং ব্যাগের চেন ও কোটের বোতাম খুলে দিয়েছিলেন? 

ক্যাপ্টেন স্কটের একটা হাত রাখা ছিল ডঃ এডওয়ার্ড উইলসনের দেহের ওপর। উইলসনের মৃত্যু মুহূর্তে তাঁর গায়ে ভরসার হাত রেখেছিলেন  প্রবাদপ্রতিম অভিযাত্রী ক্যাপ্টেন স্কট, নিজের মৃত্যুর পদধ্বনি শুনতে শুনতে। 

What's your reaction?

Excited
0
Happy
0
In Love
0
Not Sure
0
Silly
0

You may also like

Leave a reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More in:Adventure

পাতার অভিশাপ

১৪৯২ সাল, কলম্বাস পা রাখলেন সভ্য জগত থেকে বিচ্ছিন্ন এক নতুন ভূখণ্ডে। সেখানকার স্থানীয় অধিবাসীরা ...