Memories

২৩শে নভেম্বর – রবীন্দ্রনাথের জীবনের শোকাবহ দিন

২৩শে নভেম্বর রবীন্দ্রনাথের জীবনের শোকাবহ দিন। আজ লোকান্তরিত হন তাঁর ২৯ বছরের স্ত্রী মৃণালিনী দেবী। এবং তার কয়েক বছর পর তাঁর অত্যন্ত প্রিয় কণিষ্ঠ পুত্র শমীন্দ্রনাথ।

১৯০৭ সালে পূজোর ছুটিতে শমীন্দ্রনাথ তাঁর বন্ধুর সাথে মুঙ্গেরে বেড়াতে গিয়েছিলেন।

৭ই অগ্রহায়ন (২৩শে নভেম্বর) সেখানে তাঁর কলেরায় মৃত্যু হল। মৃত্যুর সময় শমীর বয়স ছিল মাত্র ১৩ বছর। শমীন্দ্রনাথ তাঁর বাবার খুব প্রিয় ছিলেন, দেখতেও পিতার অনুরূপ। এই শোক কবিকে দারুণ ভাবে নাড়া দিয়েছিল, কিন্তু শোকের প্রকাশ কোথাও নেই। গানে তিনি তাঁর শোককে বিশ্বপ্রকৃতির আনন্দের সাথে যুক্ত করলেন।

২০ শে অগ্রহায়ণ (৬ই ডিসেম্বর) তাঁর দুই মেয়ে বেলা ও মীরা কে নিয়ে তিনি শিলাইদহে চলে এলেন। বড় ছেলে রথীন্দ্রনাথ তখন আমেরিকায়।

এবারে শিলাইদহে এসে কবির লেখনী খুব একটা সচল নয়। শুধু নিয়মিত ভাবে গোরা উপন্যাসটাই লিখছেন।

কতদিন আগে কবি লিখেছিলেন ‘ সত্যই তো আমাদের কিছুই স্থায়ী নয়, কিন্তু প্রকৃতি কী এক অদ্ভুত মন্ত্রবলে সেই কথাটিই সর্বদা আমাদের ভুলিয়ে রেখেছে- সেইজন্যেই আমরা উৎসাহের সাথে কাজ করতে পারি।

ভৈরবীতে সেই চিরসত্য সেই মৃত্যুবেদনা প্রকাশ হয়ে পড়ে। আমাদের এই কথা বলে দেয় যে, আমরা যা কিছু জানি তার কিছুই থাকবে না এবং যা চিরকাল থাকবে তার আমরা কিছুই জানি না।

রবীন্দ্রনাথের মত মহামানব পারেন ব্যক্তিগত বিপুল শোকের আচ্ছাদনে দাঁড়িয়ে তাঁর প্রিয় পুত্রের মৃত্যুর ২০ দিন বাদে গান রচনা করতে, ভৈরবী রাগে ‘প্রেমে প্রাণে গন্ধে আলোকে পুলকে’…

গানটা linkএ click করলে শোনা যাবে

প্রেমে প্রাণে গানে গন্ধে আলোকে পুলকে
প্লাবিত করিয়া নিখিল দ্যুলোক-ভূলোকে
তোমার অমল অমৃত পড়িছে ঝরিয়া॥

দিকে দিকে আজি টুটিয়া সকল বন্ধ
মুরতি ধরিয়া জাগিয়া ওঠে আনন্দ;
জীবন উঠিল নিবিড় সুধায় ভরিয়া॥

চেতনা আমার কল্যাণ-রস-সরসে
শতদল-সম ফুটিল পরম হরষে
সব মধু তার চরণে তোমার ধরিয়া॥

নীরব আলোকে জাগিল হৃদয়প্রান্তে
উদার উষার উদয়-অরুণ কান্তি,
অলস আঁখির আবরণ গেল সরিয়া॥

What's your reaction?

Excited
0
Happy
0
In Love
0
Not Sure
0
Silly
0

Leave a reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

0 %